আনিসুজ্জামান (জন্ম ১৯৩৭) বলেছেন নিজের জীবনের কথা, পরিপার্শ্বের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় তাঁর বেড়ে-ওঠা, শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদান-পর্বের কাহিনী, ব্যক্তিজীবন, পরিবার, বন্ধুবৃত্ত, শিক্ষকমণ্ডলী ছাপিয়ে যা পৌছেঁ যায় বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ভূমিতে। এই সুবাদে ফুটে ওঠে সময় ও সমাজের পরিবর্তনময়তার ছবি, কেবল ঋদ্ধবান এক অবলোকনকারীর দৃষ্টিতে নয়, মহত্তর এক অংশীর বয়ানে, যিনি ইতিহাসকে প্রত্যক্ষ করেছেন নিবিড়ভাবে, তার চেয়েও গভীরভাবে চেয়েছেন ইতিহাস পাল্টে দিতে। দেশভাগপূর্বকাল থেকে এই স্মৃতিভাষ্যের শুরু, কিংবা বলা যায় তারও আগে, বঙ্গীয় মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজে আধুনিক শিক্ষার অভিঘাতে সৃষ্ট আলোড়ন থেকে জন্ম নেয়া আপন পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকে কথকতার সূচনা। বালকের চোখে আমরা দেখি কলকাতার এক উদার পরিবেশ কীভাবে দুলে ওঠে সংঘাত ও হানাহানির খণ্ডিত চেতনায়, দেশভাগের পর ঢাকার জীবন তাঁকে ঠেলে দেয় ঝড়ের চোখের কেন্দ্রবিন্দুতে এবং তিনি বহুব্যাপ্তভাবে সেই উত্তাল সময়ের মধ্যে নিজেকে ছাড়িয়ে দেন। ভাষা আন্দোলন, সাহিত্য সম্মেলন, বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ইত্যাদি ভাবগত আলোড়নের সমান্তরালে বয়ে চলে স্বাধিকার চেতনাদীপ্ত জাতীয় রাজনৈতিক আন্দোলন, এসবের সঙ্গেই তাঁর যোগ ছিল নিবিড়। আবার উচ্চশিক্ষা গ্রহণকল্পে বিদেশে অবস্থানকালে সমকালীন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট তাঁর অভিজ্ঞতায় বিপুল ছাপ এঁকে যায়। জীবন-পথ পরিক্রমণে সদা-সর্বদা তিনি বহন করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য প্রবল ভালোবাসা, সম্পৃক্ত হয়েছেন বহুবিধ জাগরণী কর্মকাণ্ডে। সারল্য, মাধুর্য ও কেৌতুকের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের অন্তরঙ্গ ঘরোয়া গল্পকথার মধ্য দিয়ে তিনি মেলে ধরেন স্বদেশ ও স্ব-সমাজের বিশাল পরিধি, ব্যক্তিকে অবলম্বন করে ব্যক্তি সত্তার বাইরে এমন এক মহাব্যাপ্তি যেখানে আমরা অনুভব করি কালের নিরবধি প্রবাহ, পরিবর্তমান যুগ ও সময়ের পরম্পরা। ফলে তাঁর রচনা নিছক স্মৃতিগ্রন্থ হয়ে থাকে নি, হয়েছে এক মহাগ্রন্থ নিজেদের জানা ও চেনার। এমন স্মৃতিভাষ্য যে-কোনো সাহিত্যেরই চিরায়ত সম্পদ।
-25%
Language
বাংলা
Number of pages
544
Edition
চতুর্থ মুদ্রণ: আশ্বিন ১৪২৬, অক্টোবর ২০১৯
ISBN
984-70124-0318-1
Country
বাংলাদেশ
Reviews
There are no reviews yet.