উপন্যাস লিখেছেন তিনি, ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় ‘উত্তম পরুষ’ এবং ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ উপন্যাস ‘লাঞ্চ বক্স’। রশীদ করীমের জন্ম ও বেড়ে-ওঠা অবিভক্ত ভারতের প্রধান নগরী কলকাতায় এক অভিজাত পরিমণ্ডলে। দেশভাগের পর ঢাকায় এসে যোগ দেন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে। ধর্মান্ধ চেতনার ঘোর কাটিয়ে জাতিস্বাতন্ত্র্যের উন্মেষ ও পরবর্তী উত্তালতা- সবকিছুর সাক্ষী তিনি। বৃহত্তর এই পটভূমিকায় দেখেছেন মানবিক সম্পর্কের বিবর্তন, নির্মোহভাবে বিচার করেছেন ব্যক্তিসত্তার আলো-অাঁধারির জটিল খেলা। তবে এসবের উপস্থাপনে তিনি সবসময়ে দেখিয়েছেন আশ্চর্য পরিমিতি ও শিল্পবোধ। প্রতিটি উপন্যাসই লিখেছেন দীর্ঘ সময় নিয়ে, উপলব্ধির গভীরে ডুব দিয়ে যাপিতজীবনের অভিজ্ঞতার নির্যাস তুলে আনতে। তাঁর উপন্যাসের বৃত্ত নাগরিক এবং নাগরিক সমাজের মধ্য ও উপরমহলের বাসিন্দাদের জীবনাভিজ্ঞতা। এই পরিসরটি তাঁর একান্ত চেনা এবং এমনি পটভূমিকায় নরনারীর সম্পর্কের আর্তি, আনন্দ-বেদনা, মোহ-বাসনা সবকিছু তিনি যে অন্তরঙ্গ কথকতার ভঙ্গিতে তুলে আনেন সেটা একান্ত দুর্লভ। যে জীবনকে উপন্যাসের শিল্পিতরূপে তিনি উপস্থাপন করতে চেয়েছেন সেজন্য উপযুক্ত এক ভাষাভঙ্গিও তৈরি করে নিয়েছেন যা ঝকঝকে ও আধুনিক, শাণিত তরবারির মতো প্রচলবদ্ধতার বৃত্ত ছিন্ন করে দেয়। কাহিনীবিন্যাসে পাঠক খুঁজে পাবেন সমাজবাস্তবতার অনুপম প্রতিফলন, কখনো খুব উচ্চকিত না হয়েও যা সমাজবদলের অন্তঃসলিলা রূপ দৃষ্টিপটে মেলে ধরে। রশীদ করীম আদর্শকে বাস্তবায়িত অথবা বাস্তবকে আদর্শায়িত করেন না। তিনি পরিবেশের কাছে সত্যনিষ্ঠ থেকেছেন। লেখক বিশ শতকের বাংলা উপন্যাসের গতিধারার এক অনন্য রূপকার, সাহিত্যকে যিনি করে তুলেছেন মানুষ, জীবন ও সমাজকে নিবিড়ভাবে জানবার ও বুঝবার অবলম্বন, আর এ-কারণেই অপরিহার্য হয়েছে যার রচনাপাঠ। দুই মলাটের মধ্যে রশীদ করীমের সমগ্র উপন্যাস উপস্থাপন করতে পেরে বর্তমান প্রকাশক তাই বিশেষ গর্ববোধ করছেন।
Reviews
There are no reviews yet.